ইরান ও আমেরিকার মধ্যেকার উত্তেজনা এখন চরমে। এরমধ্যে মার্কিন সেনাদের দেশ থেকে বের করে দেয়ার যে প্রস্তাব ইরাকের পার্লামেন্ট পাস করেছে সেটি নিয়েও রয়েছে পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি, দেখা দিয়েছে সংশয়। আসলে কি ইরাক পারবে মার্কিন সেনাদের বহিষ্কার করতে?
গেল শুক্রবার বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর কমান্ডার হিসেবে পরিচিত কাসেম সোলাইমানি নিহত হন।
ওই ঘটনার পর ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের পর রবিবার ইরাকি পার্লামেন্টে দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রস্তাবটি পাস হয়। প্রস্তাবে ইরাকের সংসদ সদস্যরা দেশ থেকে সব বিদেশি সৈন্যকে ফেরত পাঠাতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা নিতে বলা হয়।
রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়, ‘যে কোনো বিদেশি সেনার ইরাকে অবস্থানের ইতি অবশ্যই টানতে হবে সরকারকে। বিদেশি সেনাদের কোনো কারণেই ইরাকের মাটি ব্যবহার, আকাশ ও নৌপথ ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না।’
তবে এই প্রস্তাব এখন দেশটির সরকার যাচাই-বাছাই করে তারপর সিদ্ধান্ত নেবে। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে শেষ পর্যন্ত তারা মার্কিন সেনাদের বহিষ্কার করতে পারবে কিনা।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদি জানিয়েছেন, তার সরকার সংসদের প্রস্তাব বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় আইনগত প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তবে ইরাকের পার্লামেন্টে ভোটাভুটি আটকাতে জোর চেষ্টা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শেষ পর্যন্ত তাদের চেষ্টা সফল হয়নি বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে।
সিএনএন এর প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন ধরনের ভোটাভুটি চূড়ান্তভাবে ইরাকের জন্য লাভজনক হবে না বলে মার্কিন কর্মকর্তারা ইরাকি নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন।
ইরাকের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পার্লামেন্টের প্রস্তাবের ওপর শিগগির আলোচনা করতে বসবে বলে খবরমাধ্যমগুলো জানায়।
বাস্তবে কি ঘটবে তা বলা না গেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইরাকিদের মনোভাব কিছুটা নমনীয় হয়ে আসবে এবং এতে সরকার প্রস্তাবটির বাস্তবায়ন থেকে সরে আসবে, মার্কিন সূত্রের বরাত দিয়ে জানায় সিএনএন।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক থেকে সৈন্য না সরানোর ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারির হুশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন।
তবে ইরাকের পার্লামেন্ট এবং সরকার মার্কিন সেনাদের বহিষ্কার করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত অর্থনৈতিক কারণে ইরাক সরকার পিছু হটতেও পারে। কেননা যুক্তরাষ্ট্র ইরাককে বড় ধরনের অনুদান দিয়ে থাকে। আর সেটি বন্ধ হলে ইরাক পড়ে যাবে বিপদে। যেখানে অর্থনৈতিকভাবে ইরান নিজেই ধুঁকছে সেখানে ইরাককে সাহায্য করতে পারার ব্যাপারটি সম্ভাবনার খাতায় নেই।
এমন অবস্থায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা যোগ হলে ইরাকের অবস্থা আরো অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে বলে অনেকেই মত দিয়েছেন।
এছাড়াও বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের পর যদি মার্কিন সৈন্যরা ইরাক না ছাড়ে সেক্ষেত্রে ইরাক কিভাবে তাদেরকে বাধ্য করবে সেটাও বিবেচনায় নেয়ার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে ইরাক পুরোপুরি ইরানের নিয়ন্ত্রণাধীনে চলে যাবে। এই ব্যাপারটিকে আবার বিরোধিতা করবে দেশটির সুন্নি ও ইরান বিরোধী রাজনৈতিক অংশ।
এমন পরিস্থিতি লিবিয়ার মতো দুই সরকার এবং গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে পারে ইতোমধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া দেশটি।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতে বহুরাষ্ট্রীয় বাহিনীর অভিযান শুরুর পর ইরাকে ঘাঁটি গড়ে তোলে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৭ সালে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়ে ধাপে ধাপে অধিকাংশকে ফিরিয়ে আনা হলেও এখনো রয়েছে ৫ হাজার সৈন্য।
No comments: